
পশ্চিম এশিয়ায় পরমাণু হামলা? যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় এ বার ছড়াল তেজস্ক্রিয়তার আতঙ্ক। অভিযোগের তির উঠেছে ইহুদি সেনার দিকে। সত্যি সত্যিই তাঁরা পরমাণু হাতিয়ার ব্যবহার করে থাকলে ভূমধ্যসাগরের তীরের বিশাল এলাকা যে মৃতের স্তূপে পরিণত হবে, তা বলাই বাহুল্য। যদিও এই বিষয়ে রা পর্যন্ত কাড়েনি ইহুদি দেশের সরকার বা ফৌজ।

চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর প্রতিবেশী রাষ্ট্র সিরিয়ার বন্দর শহর তার্তাসে বড় রকমের বিমান হামলা চালায় ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। পাশাপাশি অনুভূত হয় ভূকম্পন। এর পরই জোরালো হতে শুরু করে ইহুদি ফৌজের পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের তত্ত্ব।
০৩

পশ্চিমি সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশের দাবি, সিরিয়ায় আমেরিকার তৈরি ‘বি-৬১’ পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে আইডিএফ। যুদ্ধবিমান থেকে সেটি প্রতিবেশী দেশটির তার্তাসে নিক্ষেপ করে ইহুদি সেনা। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সংস্থা লকহিড মার্টিনের তৈরি এফ-৩৫ জেট ব্যবহৃত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

গত শতাব্দীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শুরু হয় ঠান্ডা লড়াই। ওই সময়ে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে চলছিল পরমাণু হাতিয়ার বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা। সেখানে সোভিয়েতকে পিছনে ফেলতে ১৯৬৩ সালে ‘বি-৬১’ আণবিক বোমা তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র।

আমেরিকার প্রতিরক্ষা সদর দফতর পেন্টাগন জানিয়েছে, ‘বি-৬১’ হল প্রকৃতপক্ষে থার্মোনিউক্লিয়ার গ্র্যাভিটি বোমা। কৌশলগত আণবিক হাতিয়ার হিসাবে এটিকে ব্যবহারের কথা ভাবা হয়েছিল। ১৯৬৮ সাল থেকে এর ব্যাপক উৎপাদন শুরু করে ওয়াশিংটন। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও যুদ্ধেই ‘বি-৬১’ প্রয়োগ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

পেন্টাগন সূত্রে খবর, দ্বিস্তরীয় তেজস্ক্রিয়তা বিকিরণের ক্ষমতা রয়েছে ‘বি-৬১’ পরমাণু বোমার। তবে এর বিকিরণ ক্ষমতা কম। এর মাধ্যমে গোটা একটা শহরকে চোখের নিমেষে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আণবিক বোমাটি ১৪১.৬ ইঞ্চি লম্বা। এর ব্যাস ৩৪ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৭১৫ পাউন্ড বা ৩১৫ কেজি।

সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়ার তার্তাসে আকাশপথে হামলা হতে না হতেই মাটি কাঁপতে শুরু করে। প্রায় ৮৪০ কিলোমিটার দূরে তুরস্কের ইজ়নিক শহরেও সেই কম্পন অনুভূত হয়। বদলে যায় হাওয়ার গতি। রিখটার স্কেলে ওই কম্পনের মাত্রা তিন ছিল বলে দাবি করা হয়েছে।

পশ্চিমি প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, সিরিয়ার তার্তাসে পরমাণু হামলা চালায়নি আইডিএফ। বরং সেখানে আণবিক পরীক্ষা করেছে ইজ়রায়েল। তাঁদের আরও দাবি, পশ্চিম এশিয়ার ইহুদি দেশে দীর্ঘ দিন ধরেই পরমাণু হাতিয়ার মোতায়েন রেখেছে আমেরিকা। গৃহযুদ্ধে রক্তাক্ত প্রতিবেশীর উপর সেই অস্ত্র চালিয়ে শক্তি বুঝে নেওয়ার সুযোগ ছাড়েনি ইহুদি ফৌজ।

অন্য দিকে, এই যুক্তি মানতে নারাজ রাশিয়া। মস্কোর পাল্টা যুক্তি, আমেরিকার বোমা নিয়ে সিরিয়ায় পরমাণু পরীক্ষা চালানো ইজ়রায়েলের পক্ষে অসম্ভব। কারণ এই কাজের সবুজ সঙ্কেত কখনওই দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয়ত, এতে ইহুদি ভূমিতেও তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকছে। ফলে তেল আভিভের পক্ষে এই ঝুঁকি নেওয়া আত্মহত্যার শামিল। তা ছাড়া পশ্চিম এশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার কোনও প্রমাণ মেলেনি।

রুশ সরকারি সংবাদ সংস্থা স্পুটনিকে লেখা হয়েছে, আইডিএফ নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে সিরিয়ার যুদ্ধবিমানকে নিশানা করেছে। কিন্তু একে পরমাণু হামলা বলা যাবে না। তার্তাসে সিরিয়ার সরকারি সেনাবাহিনী প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলা-বারুদ মজুত রেখেছিল। সেই গুদাম উড়িয়েছে ইজ়রায়েল।
No comments:
Post a Comment